বৃহস্পতিবার, ৬ মার্চ, ২০১৪

" বই পড়ার গুরুত্ব " গল্প লিখেছেন অরণ্য সৌরভ

মন বিষণ্ণ। কিছুই ভাল লাগছে না। উদাসীন মনে পৃথিবীর সব সৌর্ন্দযই ফ্যাকাশে মনে হচ্ছে। বেঁচে থাকাটাই নিরর্থক যেন। নিঃসঙ্গতার করাল গ্রাসে নিমজ্জিত অথবা প্রচণ্ড মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে কাটাতে হচ্ছে জীবন। এগুলো আমাদের জীবনে প্রায়ই ঘটে। দুশ্চিন্তা, দুঃখবোধ, মানসিক ও শারীরিক কষ্টের তীব্র যাতনা আমাদের জীবনেরই অংশ। এগুলোকে মেনে নিয়েই আমাদের বেঁচে থাকতে হয়। কিন্তু এই পরিস্থিতি অনেক সময়ই আমাদের কর্মস্পৃহা ও সম্ভাবনাকে নষ্ট করে দেয়। এই থেকে পরিত্রাণের জন্য বই-ই হতে পারে অন্যতম নিয়ামক। আপনি যে ধরনের বই পড়ে আনন্দ পান সেই রকম বই-ই পড়তে পারেন। দেখবেন মন ভাল হয়ে যাবে। বইয়ের মাঝে নিমজ্জিত থেকে আপনি আপনাকে খুঁজে পাবেন। মানব সভ্যতার সূচনা থেকেই মানুষের পাঠ অভ্যাসের তথ্য পাওয়া যায়। মানুষ বই পড়ে মনের খোরাকের জন্য, অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য এবং সর্বোপরি নিজেকে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করার জন্য। বই পড়া মানুষের এমন একটি দক্ষতা যার কারণে মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থার দ্রুত উন্নতি সাধন হয়। বই পড়া এখন শুধুমাত্র অবসরের বিনোদনের মাধ্যম নয় বরং এটি এখন আমাদের আর্থসামাজিক অবস্থা পরিবর্তনের একটি শক্তিশালী মাধ্যম। বই পড়ার গুরুত্ব আমরা কিছু মনীষীদের উক্তি থেকে অতি সহজেই বুঝতে পারি। স্পিনোজা বলেন, ‘ভাল খাদ্য বস্তু পেট ভরে কিন্তু ভাল বই মানুষের আত্মাকে পরিতৃপ্ত করে।’ দেকার্তে বলেন, ‘ভাল বই পড়া মানে গত শতাব্দীর সেরা মানুষদের সঙ্গে কথা বলা।’ ইউরোপ কাঁপানো নেপোলিয়ান বলেন, ‘অন্তত ষাট হাজার বই সঙ্গে না থাকলে জীবন অচল।’ জন মেকলে বলেন, ‘প্রচুর বই নিয়ে গরিব হয়ে চিলেকোঠায় বসবাস করব তবু এমন রাজা হতে চাই না যে বই পড়তে ভালবাসে না।’ নর্মান মেলর বলেন, ‘আমি চাই যে বই পাঠরত অবস্থায় যেন আমার মৃত্যু হয়।’ যুগে যুগে এই রকমভাবে শত শত মনীষী বই পড়ার গুরুত্ব মানুষের কাছে তুলে ধরেছেন। বই পড়া মানসিক প্রক্রিয়াকে সক্রিয় রাখে। বই পড়লে আমাদের মস্তিষ্ক চিন্তা করার খোরাক পায়, সৃজনশীলতা বাড়ে এবং তথ্য ধরে রাখার ক্ষমতা সৃষ্টি হয়। বই পড়লে মানুষ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আধুনিক মনষ্ক হয়ে ওঠে। একটি জটিল কঠিন বিষয়কে সহজ করতে পারে বই। ক্লাসে একজন শিক্ষক যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেন বই তার চেয়েও কঠিন বিষয়গুলোর সহজ সমাধানের তথ্য দিতে পারে। বই আপনার দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে সাহায্য করবে। অনেক গবেষণায় প্রমাণিত এবং দেখা গেছে যে, কেউ যদি তার মস্তিষ্কের ক্ষমতাকে কাজে না লাগায় তবে তার ব্রেইন পাওয়ার ধীরে ধীরে কমতে থাকে, স্মৃতিশক্তির ধরে রাখার ক্ষমতা কমতে থাকে। বই পড়লে মানুষের মস্তিষ্কের কোষ এবং কলাসমূহের কার্যক্ষমতা বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। একজন মানুষ যে পেশায়ই দক্ষ হোক না কেন তার পেশাদারিত্বে উৎকর্ষতা অর্জনের জন্য বার বার বইয়ের কাছে ফিরে আসতে হয়। কারণ জ্ঞানের সূচনা সেখান থেকে এবং সে জ্ঞানকে সামগ্রিকভাবে কাজে লাগানোর দক্ষতা মানুষ বই পড়ে পেয়ে থাকে। মানুষের মননশীল, চিন্তাশীল, সৃষ্টিশীল চিন্তার যাবতীয় সূচনার বিস্ফোরণ একমাত্র বইয়ের মাধ্যমে হতে পারে। বই পড়ার গুরুত্ব হাজার হাজার পৃষ্ঠাজুড়ে লিখলেও শেষ হবে না। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় দিন দিন মানুষের মাঝে বই পড়ার আগ্রহ কমে যাচ্ছে। মানুষ এখন বইয়ের পরিবর্তে ফেসবুক, টিভি, সিনেমা আর আড্ডা দিয়েই তাদের অবসর সময় কাটায়। বই কেনা ও পড়ার অভ্যাসে ভাটা পড়ছে। প্রযুক্তি নির্ভর কিছু মানুষ বইকে সময়ক্ষেপণ বলেই মনে করে। ছাত্রছাত্রীরা নিতান্ত বাধ্য হয়ে পাঠ্য বই পড়ে। এই যে বই পড়ার প্রতি যে অনীহার প্রবণতা সৃষ্টি হয়েছে তা আমাদের ব্যক্তিক ও সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের অন্যতম একটা কারণ। আমাদের জীবসত্তা জাগ্রত থাকলেও মানবসত্তা জাগ্রত করার সিঁড়ি হচ্ছে বই। বই পড়তে হবে। তাই বলব বই পড়ার নিয়মিত অভ্যাস তৈরি করুন। দেখবেন মানসিকভাবে অনেক স্বস্তিতে যেমন থাকতে পারবেন তেমনি জ্ঞানের আলোয় নিজেকে আলোকিত করতেও সক্ষম হবেন। _________ সরকারী সফর আলী কলেজ;আড়াইহাজার, নারায়নগঞ্জ

বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

কবিতা /ভাষার গল্প /অরণ্য সৌরভ


কবিতা /ভাষার গল্প /অরণ্য সৌরভ 


উৎসর্গঃ ভাষা শহীদদের স্মরনে
******************
ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ, নেই
কি কারো মনে?
শহীদ যারা হয়েছিল সেই বাহান্ন
সনে।
মাতৃভাষার তরে যারা বিলিয়ে দিল
প্রাণ।
রক্ত দিয়ে রাখল যারা
বাংলাদেশের নাম ।।
পাকবাহিনীর অত্যাচারে শহীদ হল
যারা;
বাংলা মায়ের মান রাখিতে হল
পাগল পারা
শহীদ হল বরকত,সালাম,শহীদ হল রফিক
শহীদ হল জব্বার ভাই

শহীদ হল শফিক।।
তাদের রক্তে রাঙা এ
মাটিতে ঘুমিয়ে তারা
রক্তে তাদের
রয়ে গেছে,রয়েছে ঝর্ণা ধারা
সারা বিস্ব করেছি ভ্রমন পাইনি খুজে
এমন দেশ____
সে দেশ আমার প্রিয় দেশ,
প্রিয় সোনার বাংলাদেশ।।

-সমাপ্ত-
সরকারী সফর আলী কলেজ, আড়াইহাজার, নারায়নগঞ্জ। 
http//bnaglanews 26.com
https://www.facebook.com/banglanews26?skip_nax_wizard=true

শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

আগডুম বাগডুম কবিতাবলী

আগডুম বাগডুম কবিতাবলী


২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪, শনিবার, ৯:১৮
এই ভাষাতে
আ. শ. ম. বাবর আলী

মুখের ভাষা বুকের ভাষা
আমার বাংলাভাষা,
এই ভাষাতে কথা বলে
পুরাই মনের আশা।

মনের যত ভাবনা প্রকাশ
এই ভাষাতেই করি,
এই ভাষাতেই গান গেয়ে যে
পরান আমার ভরি।

এই ভাষাতে গল্প পড়ি
এই ভাষাতে লিখি,
এই ভাষাতে মাকে আমার
‘মা’ ডাকতে শিখি।

এই ভাষারই জন্য ভাইরা
গড়ল ইতিহাস,
ঘটনাটা ফেব্রুয়ারির
বাংলা ফাগুন মাস।


বাংলা ভাষায় স্বপ্নকুঁড়ি ফোটে
আবেদীন জনী

বাংলা ভাষা মায়ের মুখের
বাংলা ভাষা সৃষ্টি সুখের
এই ভাষাতে মা ডাকেÑ আয় সোনা,
মায়ের ভাষার বাঁচাতে মান
ভাই দিয়েছে অমূল্য প্রাণ
এই ভাষাতে হাজার স্বপ্ন বোনা।

একুশ এলে শোকের পাশে
বাংলা ভাষার বর্ণ হাসে
সেই হাসিতে ভাইয়ের মুখটা খুঁজি,
মায়ের দু’চোখ অশ্রুঝরা
পুত্রশোকে মনটা মরা
হঠাৎ বলে, খোকা এলো বুঝি!

বাংলা ভাষা বিশ্বজুড়ে
গল্প-কথা গানের সুরে
সুরের জাদু হাওয়ায় হাওয়ায় ছোটে,
বাংলা ভাষায় শিখি পড়া
বাংলা ভাষায় লিখি ছড়া
বাংলা ভাষায় স্বপ্নকুঁড়ি ফোটে।


khmahabub@yahoo.com

জসীমউদ্দীনের কবিতা :প্রসঙ্গ রাখাল

বিশ্বজিৎ ঘোষ
হাজার বছরের বাংলা কবিতার বিকাশের ধারায় কবি জসীমউদ্দীন একটি উজ্জ্বল ও বিশিষ্ট নাম। রবীন্দ্রযুগের কবি হয়েও রবীন্দ্রপ্রভাব থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত থেকে পল্লীজীবনকে অবলম্বন করে জসীমউদ্দীন নির্মাণ করেছেন স্বকীয় এক কাব্যভুবন। তার সাধনায় খুলে গেছে বাংলা কবিতার নতুন এক দুয়ার। বাংলা গীতিকা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে জসীমউদ্দীন আধুনিক দৃষ্টি দিয়ে চোখ ফেরালেন পল্লীজীবনের দিকে, পল্লীর সহজ জীবন-প্যাটার্নের দিকে, বাংলার লোকজীবনের বৃহত্তর আঙ্গিনায়_ অবারিত গ্রামীণ জনপদে তিনি খুঁজে পেলেন তার শিল্পবৃক্ষের প্রত্নবীজ। বাংলার গ্রামীণ-প্রকৃতি আর পল্লীর সাধারণ মানুষ নিয়েই গড়ে উঠেছে জসীমউদ্দীনের কবিতালোক। গ্রামীণ জীবনকেন্দ্রিক বিস্ময়কর এক কবি ভাষায় হাজার বছরের বাংলার পল্লী নতুন প্রাণ নিয়ে জেগে উঠল জসীমউদ্দীনের কবিতায়। জসীমউদ্দীনের কবিতায় যেসব মানুষের ছবি পাই, যাদের অবলম্বন করে তিনি নির্মাণ করেছেন তার কবি-আত্মার পরম আকাঙ্ক্ষার কথা, তাদের অন্যতম হচ্ছে 'রাখাল'। জসীমউদ্দীনের কবিতায় বিচিত্র অনুষঙ্গে এবং বহুমাত্রিক পরিচয়ে রাখালের উপস্থিতি সচেতন পাঠকের দৃষ্টি এড়িয়ে যাওয়ার কথা নয়। তবু এতকাল জসীমউদ্দীনের এ রাখাল সমালোচকের দৃষ্টির অগোচরেই থেকে গেছে, ধরা পড়েনি তার রূপ আর রূপান্তরের ব্যঞ্জনা। জসীমউদ্দীনের কাব্যে উপেক্ষিত এই রাখাল নিয়েই আজ আমরা আলোচনা করব, জানতে চাইব তার 'রাখাল'-এর মৌল স্বরূপ আর রাখালকে কেন্দ্র করে তার পরম আকাঙ্ক্ষার কথা।
২. জসীমউদ্দীনের প্রথম পর্বের কবিতায়, প্রধানত রাখালী কাব্যে, পল্লীজীবনের অন্তরঙ্গ আত্মীয় গ্রামীণ রাখালের একটি সহজ নিরাভরণ রূপ অঙ্কিত হয়েছে। রাখাল আর পল্লীজীবন যেন একসূত্রে গাঁথা_ রাখালের সোহাগ আর শুশ্রূষাতেই সুশ্রী হয়, ঋদ্ধিময় হয় গ্রামীণ জনপদ। ফসলের মাঠে দিনভর কাজ আর কাজ, হঠাৎ সামান্য অবসর পেলেই বাঁশি নিয়ে বিভোর হয়ে যাওয়া গ্রামীণ রাখালের এই পরিচয় আমাদের অভিজ্ঞতায় উজ্জ্বল। 'রাখাল ছেলে' কবিতায় আমরা পেয়ে যাই কর্মব্যস্ত পরমাত্মীয় সেই রাখালের সাক্ষাৎ_
'রাখাল ছেলে! রাখাল ছেলে! সারাটা দিন খেলা,
এ যে বড় বাড়াবাড়ি, কাজ আছে যে মেলা।'
'কাজের কথা জানিনে ভাই, লাঙ্গল দিয়ে খেলি,
নিড়িয়ে দেই ধানের খেতের সবুজ রঙের চেলি।

সরষে বালা নুইয়ে গলা হল্দে হাওয়ার সুখে
মটর বোনের ঘোমটা খুলে চুম দিয়ে যায় মুখে!
ঝাউয়ের ঝাড়ে বাজায় বাঁশি পউষ-পাগল, বুড়ী,_
আমরা সেথা চষ্তে লাঙল মুর্শীদা-গান জুড়ি।
খেলা মোদের গান গাওয়া ভাই, খেলা লাঙল-চষা,
সারাটা দিন খেল্তে জানি জানিইনেক বসা।'
['রাখাল ছেল'/রাখালী]
কাব্যের নামই কেবল রাখালী কিংবা ধানখেত নয়, এসব গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত কবিতাবলির শরীরে ও সত্তায়, দেহে ও মর্মেও রাখালের অস্তিত্ব প্রকৃতই অবিচ্ছেদ্য। বস্তুত রাখাল-ভাবনাই যেন জসীমউদ্দীনের প্রথম পর্বের কাব্যপ্রত্যয়ের মৌলবীজ। জসীমউদ্দীনের এ রাখাল, কৃষ্ণবর্ণের এই গ্রামীণ কিশোর সহজতা ও সারল্য অতিক্রম করে ক্রমেই হয়ে উঠেছে শক্তি ও সৌন্দর্যের অপরূপ আধার। নক্সী কাঁথার মাঠ কাব্যে গ্রামীণ রাখালের অবয়বে ও অন্তরে অঙ্কিত হয়েছে শক্তি ও সৌন্দর্যের অপরূপ আল্পনা_
এই গাঁয়ের এক চাষার ছেলে লম্বা মাথার চুল,
কালো মুখেই কালো ভ্রমর, কিসের রঙিন ফুল!
কাঁচা ধানের পাতার মত কচি-মুখের মায়া,
তার সাথে কে মাখিয়ে দেছে নবীন তৃণের ছায়া।
জালি লাউয়ের ডগার মত বাহু দুখান সরু,
গা খানি তার শাওন মাসের যেমন তমাল তরু।
বাদল-ধোয়া মেঘে কেগো মাখিয়ে দেছে তেল,
বিজলী মেয়ে পিছ্লে পড়ে ছড়িয়ে আলোর খেল।
[নক্সী কাঁথার মাঠ]
গ্রামীণ রাখালের এই বিমুগ্ধ ছবি অঙ্কিত হয়েছে জসীমউদ্দীনের আরও অনেক কবিতায়।
৩. বর্তমানের গ্রামীণ রাখালকে জসীমউদ্দীন কখনও কখনও তার কবিতায় নিয়ে গেছেন পুরাণের আর এক রাখালের কাছে, নাম যার কৃষ্ণ। গ্রামীণ রাখাল আর পুরাণের রাখাল জসীমউদ্দীনের কবি-আত্মার আন্তর-বাসনায় পরিণত হয়েছে এক অখণ্ড সত্তায়_ পল্লীর রাখাল ছেলেই হয়ে ওঠে কৃষ্ণ, জলীর বিলের কোনো এক গাঁয়ের রূপাই বৃন্দাবনের কৃষ্ণ হয়ে বাজায় বেদনার পৌরাণিক বাঁশি, আর তার মায়ের অবয়বে হঠাৎ করেই হেসে ওঠে দূর-অতীতের ধাত্রীমাতা যশোদা_
ক. তরুণ কিশোর ছেলে/ আমরা আজিকে ভাবিয়া না পাই তুমি হেথা কেন এলে?/ তুমি ভাই সেই ব্রজের রাখাল, পাতার মুকুট পরি,/ তোমাদের রাজা আজো নাকি খেলে গেঁয়ো মাঠখানি ভরি।/ আজো নাকি সেই বাঁশীর রাজাটি তমাল-লতার ফাঁদে,
চরণ জড়ায়ে নূপুর হারায়ে পথের ধুলায় কাঁদে।/ কে এলে তবে ভাই,/ সোনার গোকুল আঁধার করিয়া এই মথুরার ঠাঁই
['তরুণ কিশোর'/রাখালী]
খ. এই গাঁয়ের এক চাষার ছেলে লম্বা মাথার চুল,/ কালো মুখেই কালো ভ্রমর, কিসের রঙিন ফুল!/....কালো চোখের তারা দিয়েই সকল ধরা দেখি,/ কালো দোতের কালি দিয়েই কেতাব কোরান লেখি।/ জনম কালো, মরণ কালো, কালো ভুবনময়;/ চাষীদের ওই কালো ছেলে সব করছে জয়।/...কালোয় যে-জন আলো বানায়, ভুলায় সবার মন,/ তারির পদ-রজের লাগি লুটায় বৃন্দাবন।/ সোনা নহে, পিতল নহে, নহে সোনার মুখ,/ কালো-বরণ চাষীর ছেলে জুড়ায় যেন বুক।/ যে কালো তার মাঠেরি ধান, যে কালো তার গাঁও!/ সেই কালোতে সিনান্-করি উজল তাহার গাঁও।
[নক্সী কাঁথার মাঠ]
গ. রাখালের রাজা! আমাদের ফেলি কোথা গেলে ভাই চলে,/ বুক হতে খুলি সোনালতাগুলি কেন গেলে পায়ে দলে?/ ....হাজার কৃষাণ কাঁদিছে অঝোরে কোথা তুমি মহারাজ?/ ব্রজের আকাশ ফাড়িয়া ফাড়িয়া হাঁকিছে বিরহ-বাজ।/....পষ্ট করিয়া কহিছি কানাই, এখনও সময় আছে,/ গাঁয়ে ফিরে চল, নতুবা তোমায় কাঁদিতে হইবে পাছে।/ জনম-দুখিনী পল্লী-যশোদা আশায় রয়েছে বাঁচি,/ পাতায় পাতায় লতায় লতায় লতিয়ে স্নেহের সাজি।/ আঁধা, পুকুরের পচা কালো জলে মরছে কমল-রাধা,/ কৃষাণ বধূরা সিনান করিতে শুনে যায় তারি কাঁদা।
['রাখালের রাজগী'/ধানখেত]
_ প্রথম উদ্ধৃতিতে গ্রামের রাখাল ছেলে সহসাই হয়ে যায় ব্রজের রাখাল কৃষ্ণ, আর মুহূর্তেই তার হাতে ওঠে অবিস্মরণীয় সেই বাঁশি, যার সুরে মোহিত ছিল রাধা। দ্বিতীয় উদ্ধৃতিতে কৃষ্ণবর্ণের রাখালের সঙ্গে শ্যামবর্ণ কৃষ্ণের সাযুজ্যচিত্র অঙ্কিত হয়েছে, অঙ্কিত হয়েছে বৃন্দাবনে সবার মন-ভোলানো কৃষ্ণরূপী রূপাই-এর ছবি, সে-ও জলীর ধারের 'বৃন্দাবন'কে তার শক্তি আর সাহস আর সৌন্দর্য দিয়ে করে তুলেছে মাতোয়ারা। দুই যুগের দুই নায়কের সাযুজ্যবন্ধন, কিংবা বলি আন্তরমিল দেখানোর জন্য জসীমউদ্দীন অসামান্য তাৎপর্যে এখানে ব্যবহার করেছেন 'কালো' রঙ-এর ব্যঞ্জনা। কৃষ্ণও ছিল কালো, কালো জলীর বিলের রূপাইও। তৃতীয় উদ্ধৃতিতে গ্রামের রাখাল আর পুরাণের কৃষ্ণ, পলি্ল-জননী আর যশোদা, কৃষাণ-বধূ আর রাধা, বাংলাদেশের নাম-না-জানা কোনো-এক অখ্যাত গাঁও আর স্মৃতিলোকের বৃন্দাবন_ সবকিছু মিলেমিশে একাকার।
গ্রামের রাখাল আর ব্রজের রাখাল_ উভয়ের মধ্যে সাযুজ্যচিত্র অঙ্কন করতে গিয়ে জসীমউদ্দীন পৌনঃপুনিকভাবে ব্যবহার করেছেন 'বাঁশি' অনুষঙ্গ। জসীমউদ্দীনের কবিতায় ভালোবাসা আর বেদনা, আহ্বান আর আনন্দ, মিলন আর বিরহের সমার্থক হয়ে গেছে 'বাঁশি' শব্দটি। বহুমাত্রিক ব্যঞ্জনায় ব্যবহৃত হয়েছে বলে 'বাঁশি' জসীমউদ্দীনের কবিতায় সঙ্কেত-এ উন্নীত হয়েছে। গ্রামের রাখালের বাঁশি মুহূর্তেই ওঠে কৃষ্ণের অধরে_ সোজনের বাঁশির সুর দুলীর কাছে মুহূর্তেই মনে হয় যেন রাধাকে ঘর-ছাড়া করা কৃষ্ণের বাঁশির সুর_
আহা! ওই শোন, বেদে নাও হতে কেমন বাজিছে বাঁশী,
আহারে কাহার বুক ভাঙিয়াছে লয়ে কি দুখের রাশি!
....নিঠুর সে বাঁশী মানে না বারণ, স্বামীর সুনাম তার,
বিত্তি-বেসাত জোর করে দুলী মনে করে বার বার।
হায় সে বাঁশীর সুরের জোয়ারে সকল ভাসিয়া যায়,
অবলা বালিকা_ ভগবান! তুমি শক্তি দাও গো তায়।
[সোজন বাদিয়ার ঘাট]
কখনও-বা মাঠের রাখাল রূপাইয়ের বেদনা আর রাধাকে পেতে উদ্গ্রীব কৃষ্ণের আকুলতা একাকার হয়ে সৃষ্টি হয় যন্ত্রণার চিরায়ত এক সুরধ্বনি_
ক. মাঠের রাখাল, বেদনা তাহার আমরা কি অত বুঝি?
মিছেই মোদের সুখ-দুঃখ দিয়ে তার সুখ-দুঃখ খুঁজি।
আমাদের ব্যথা কেতাবেতে লেখা, পড়িলেই বোঝা যায়;
যে লেখে বেদনা বে-বুঝ বাঁশীতে কেমনে দেখাব তায়?
....মোরা জানি খোঁজ বৃন্দাবনেতে ভগবান করে খেলা,
রাজা-বাদশার সুখ-দুঃখ দিয়ে গড়েছি কথার মেলা।
....বাজায় রূপাই বাঁশিটি বাজায় মনের মতন করে,
যে ব্যথা বুকে ধরিতে পারেনি সে ব্যথা বাঁশীতে ঝরে।
[নক্সী কাঁথার মাঠ]
খ.আজকে দুলীর বুক ভরা ব্যথা, কহিয়া জুড়াবে
এমন দোসর কেহ নাই হায় তার,
শুধু নিশাকালে, গহন কাননে, থাকিয়া থাকিয়া
কার বাঁশী যেন বেজে মরে বারবার।
.....কে বাঁশী বাজায়! কোন দূর পথে গভীর রাতের
গোপন বেদনা ছাড়িয়া উদাস সুরে,
দুলীর বুকের কান্দনখানি সে কি জানিয়াছে,
তাহার বুকেরে দেখেছে সে বুকে পুরে?
[সোজন বাদিয়ার ঘাট]
বৃন্দাবনে কৃষ্ণের বাঁশি শুনে বিভোর হয়েছিল রাধা, আর শিমুলতলীতে সোজনের বাঁশির সুরে আত্মহারা হলো দুলী_ দু'যুগের দুই নারীকে ঘরছাড়া করলো যে পুরুষ_ সেই কৃষ্ণ সেই সোজন-তো এভাবেও, নারীর বেদনাসম্ভব-সূত্রে, হয়ে ওঠে এক সত্তা। বাঁশিতে আত্মহারা রাধা আর দুলীও যেন এক-প্রাণ। পল্লীর রাখাল আর পুরাণের কৃষ্ণের নানামাত্রিক সাযুজ্যচিত্র নির্মাণের পাশাপাশি জসীমউদ্দীন তার কবিতায় রাখালের মনোলোক উন্মোচনের জন্যে শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য এবং বৈষ্ণব পদাবলীর নানা শব্দ ও অনুষঙ্গও সচেতনভাবে ব্যবহার করেছেন। শাঁখের করাত, বৃন্দাবন, কৃষ্ণ, কানাই, মথুরা, বাঁশী, যশোদা, সিনান, উজল, কালীদহ, ঘন-দেয়া-সম্পাদ, গোকুল, কালিন্দী, তমালতল, ব্রজের দুলাল, ব্রজধূলি, সুদূর কৃষাণ-পুর, কালো যমুনার জল বেণুবন, কমল-রাধা, কদম্ব-রেণু, নিঠুর বংশীয়াল, মৃদঙ্গ, মোহন বাঁশী, রাধিকা, কৈশোর যৌবন দুহু মেলি গেল, কংস-কারা, গোপী_ এসব শব্দ-ব্যবহার থেকেও অনুধাবন করা যায় রাখাল-প্রসঙ্গে জসীমউদ্দীনের কাব্য-প্রত্যয়ের মৌল সুরটি।
৪. উপর্যুক্ত আলোচনায় একথা উপস্থাপিত হয়েছে যে, পল্লীর রাখাল ছেলে জসীমউদ্দীনের কবিতায় পুরাণের কৃষ্ণ-অবয়ব পেয়ে নতুন তাৎপর্যে অভিষিক্ত হয়েছে। পল্লীর রাখাল ছেলে বিরামহীন কাজ করে নির্মাণ করে সভ্যতা-সৌধ, বৃন্দাবনের কৃষ্ণ মথুরায় গিয়ে কংসকে হত্যা করে রক্ষা করে মানবসভ্যতা, আর এমনি আরেক রাখাল_ রাজনীতির রাখাল_ হানাদার-শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে আকাশে তুলে ধরেন স্বাধীনতার পতাকা। ত্রিমাত্রিক এই রাখালের তৃতীয় রাখাল, রাজনীতির এই রাখালের ছবি অঙ্কন করে জসীমউদ্দীন সম্পন্ন করেন তার রাখাল-ভাবনা। রাজনীতির এই রাখাল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে জসীমউদ্দীন লিখেছেন অসাধারণ এক কবিতা 'বঙ্গ-বন্ধু', যেখানে তিনি ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর গৌরবান্বিত সংগ্রামের ইতিহাস চিত্রিত করেছেন_
মুজিবর রহমান!
ওই নাম যেন বিসুভিয়াসের অগি্ন-উগারী বান।/....বাংলাদেশের মুকুটবিহীন তুমি প্রমূর্ত রাজ,/ প্রতি বাঙালির হৃদয়ে হৃদয়ে তোমার তক্ত-তাজ।/ তোমার একটি আঙ্গুল হেলনে অচল যে সরকার/ অফিসে অফিসে তালা লেগে গেছে_ স্তব্ধ হুকুমদার।/....আরো একদিন ধন্য হইনু সে মহাদৃশ্য হেরি,/ দিকে দিগন্তে বাজিল যেদিন বাঙালির জয়ভেরী।/ মহাহুঙ্কারে কংস-কারার ভাঙিয়া পাষাণ দ্বার,/ বঙ্গ-বন্ধু শেখ মুজিবেরে করিয়া আনিল বার।/ আরো একদিন ধন্য হইব, ধন-ধান্যেতে ভরা,/ জ্ঞানে-গরিমায় হাসিবে এ দেশ সীমিত-বসুন্ধরা।/ মাঠের পাত্রে ফসলেরা আসি ঋতুর বসনে শোভি,/ বরণে সুবাসে আঁকিয়া যাইবে নক্সীকাঁথার ছবি।
['বঙ্গ-বন্ধু'/ভয়াবহ সেই দিনগুলিতে]
৫. এইভাবে দেখা যায়, গ্রামের রাখাল ছেলে, পুরাণের কৃষ্ণ আর বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের অবিস্মরণীয় রাখাল বঙ্গবন্ধু জসীমউদ্দীনের কবিতায় মিলে-মিশে একাকার হয়ে যায়_ তিন রাখাল মিলে সৃষ্টি হয় একটি একক সত্তা-স্বাধীনতা, সমৃদ্ধি আর মানবকল্যাণই যার কেন্দ্রীয় অভীপ্সা। তিন প্রান্তের তিন রাখাল মিলে পূর্ণ হয় জসীমউদ্দীনের রাখাল-ভাবনা। পল্লী জীবনের রূপকার হিসেবে জসীমউদ্দীনের স্বকীয়তার পাশাপাশি এ রাখাল-প্রত্যয়ও তার প্রাগ্রসর কাব্য-ভাবনার ফল। জসীমউদ্দীনের এই ত্রিমাত্রিক রাখাল-সত্তা থেকে আমরা তার মানবকল্যাণকামী কাব্যবিশ্বাসকেই আবিষ্কার করতে পারি। জসীমউদ্দীনের এই 'রাখাল' উত্তর-আধুনিকতার বিনির্মাণ তত্ত্ব আর উত্তর-ঔপনিবেশিক ডিসকোর্স থেকেও কি ব্যাখ্যা করা যায় না?  
 
 

বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

কবিতা / বিদায় /কে,এইচ, মাহাবুব



তোমার দেহো থেকে যখন চলে যাবে প্রাণ,
গাইবে যখন মানুষ কান্না নামের গান ।
আগর বাতি হবে তোমার একার খাবার,
সাথে রবে বড়ই পাতা গরম জল আবার ।

তোমার স্বজনেরা তোমার চারেদিকে দাঁড়ীয়ে,
বসে পরে রবে মাটিতে আছড়ে দু-হাত বাড়িয়ে।
তোমায় রাখবে দূরের কারোর আশায়,
যারা রেখেছিলো আদরে আর ভালো বাসায় ।

সবাই আছে পাশে সাথে তবু তোমার নয়,
পাশে আছে সবাই সাথে যেতে ভীষণ ভয়।
তোমায় দেখে অবুঝ শিশুটি ও যে কাঁদবে,
তোমায় নিয়ে আর কেউ না ঘর বাঁধবে ।

পরে রবে তোমার প্রিয়  ব্যবহারের সব,
চারেদিকে ভেসে যাবে তুমি নেই রব ।
পাবেনা খুঁজে আজ তোমার আপন কে কতো,
শেষ দেখা দেখতে তোমায় এসেছে যে শতো।


                      -সমাপ্ত-
  সাহিত্য  সংসদ ,সাভার,ঢাকা-১৩৪৪ ।
ই-মেইলঃ khmahabub@yahoo.com
তারিখ :  ১৮-০২-২০১৪ ইং ।
বাংলা নিউজ 26.com 

রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

এ কোন অপরুপা

এ কোন অপরুপা
1796628_227623317421765_1297464315_n
 

















তুমি কি পারোনা আমার হতে
কেন থাকো তুমি তোমার মতে ।
ভালো লেগেছে তোমায় বেশ
তুমি সুন্দর দারুণ তোমার কেশ ।


তোমায় সঙ্গী করে আমি পেলে
জীবনটা যাবেই হেসে খেলে ।

পারোনা কি আমায় ভালবাসতে ।
তোমার সুখে একটুখানি হাসতে ।

চোখে ভাসে…ভাবনায় মনে জাগে
দেখিনি এ পথে কখনো আগে ।
দেখেছি পারিনি তোমায় ভুলিতে
এ মনে আঁকা ছবি যেন রং তুলিতে ।

যেন এলো পরী হয়ে আকাশ থেকে উড়ে,
তুমি চলে গেলে…আমি তাকিয়ে রইলাম
দূর… বহু দূর… বহু দূরে……… ।

********** সমাপ্ত **********
তারিখ : ০৭-০২-২০১৪ ইং ।

স্বপ্ন পূরণ

কবিতা রূপসী মেয়ে / কে,এইচ,মাহাবুব



বাদল এল রিমঝিম আষাঢ়ের দুপুরে
যায় কে কলসি নিয়ে আমাদের পুকুরে।
আনবে কে জল সেই কলসি ভরিয়া
তাকিয়ে আছে কি কেউ আমার পথ ধরিয়া। 

আমি যে তার জন্য বসে আছি পথো চেয়ে
দেখবো বলে আসবে কখন সেই মেয়ে ।
যার দু-চোখে মিসে আছে মায়াবী জল
দু-পায়ে পরা নতুন রুপোর মল । 

যাকে কাছে পেতে চায় পুকুরের পানি
শাড়ীর আঁচল নেয় ধরে বার বার টানি ।
হঠাৎ করে আসে নেমে বাদলের ধারা
ভিজিয়ে নেয় তার অঙ্গটার সারা । 

বাদল লুটায় তার সাথে ভালো বাসার জালে
রিমঝিম বৃষ্টির সুরের তালে তালে ।
মন চায় আমি ও লুটায়ে পরি
আনন্দে জীবন কাটাই ওর গলা ধরি । 

ভালো লাগে ভালো বাসতে হলেও পর
আপন হলে অকে নিয়ে বাঁধতাম সুখের ঘর । 

********** সমাপ্ত **********
তারিখ :   ২৬-০৭-২০০১ ইং ।

শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

নদীর জলে ভেজা কবিতা

কবিতা
নদীর জলে ভেজা কবিতা
- কে এইচ মাহাবুব
********************************
দীর জলে ভেজা কবিতা
- কে এইচ মাহাবুব

আমার হাতে এই মাত্র লেখা কয়েকটি কবিতা
বসে আছি হাতে নিয়ে নদীর কুলে,
অন্য গুলো রেখেছিলাম দূরে
হটৎ ফিরে দেখি ভিজছে তাই জলে ।

ওঠালাম কবিতার পাতা গুলো
ভিজে লেচলেচে সব ক”টা ,
হতভাগ্য এ হাতের ছোঁয়ায়
মুছে ফেল্লাম কাগজের সব পানিটা ।

এক এক করে সব পাতা গুলো
ভ্যান গাড়ীর উপর শুকাতে দিলাম,
নিয়ে যায় যদি গাড়ীর মালিক গাড়ীটা
আমি তখন সে ভয়েই কাঁপছিলাম ।

কিন্তু কবিতা আমায় ছেড়ে যায়নি
ছেড়ে গিয়েছিলো আমার পায়ের জুতা
আমার মনে পড়েনি কিছুই
কবিতার চিন্তায় ধরেছিল মাথা ।

আমি কাদের সাথে যেন যাচ্ছিলাম
একটি মেয়ে...ঠিক মনে নেই
ঠিক সে সময়ই ভাঙলো আমার স্বপ্নটা
খুঁজে বেড়াই স্বপ্নটা একলাই ।
********** সমাপ্ত **********

তারিখ :   ১১-০৮-২০০১ ইং ।
সাহিত্য সংসদ ,সাভার, ঢাকা-১৩৪৪ ।
ই-মেইল :    khmahabub@yahoo.com

 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
আমার হাতে এই মাত্র লেখা কয়েকটি কবিতা
বসে আছি হাতে নিয়ে নদীর কুলে,

অন্য গুলো রেখেছিলাম দূরে
হটৎ ফিরে দেখি ভিজছে তাই জলে ।

ওঠালাম কবিতার পাতা গুলো
ভিজে লেচলেচে সব ক”টা ,
হতভাগ্য এ হাতের ছোঁয়ায়
মুছে ফেল্লাম কাগজের সব পানিটা ।

এক এক করে সব পাতা গুলো
ভ্যান গাড়ীর উপর শুকাতে দিলাম,
নিয়ে যায় যদি গাড়ীর মালিক গাড়ীটা
আমি তখন সে ভয়েই কাঁপছিলাম ।

কিন্তু কবিতা আমায় ছেড়ে যায়নি
ছেড়ে গিয়েছিলো আমার পায়ের জুতা
আমার মনে পড়েনি কিছুই
কবিতার চিন্তায় ধরেছিল মাথা ।

আমি কাদের সাথে যেন যাচ্ছিলাম
একটি মেয়ে...ঠিক মনে নেই
ঠিক সে সময়ই ভাঙলো আমার স্বপ্নটা
খুঁজে বেড়াই স্বপ্নটা একলাই ।
 
********** সমাপ্ত **********

তারিখ : ১১-০৮-২০০১ ইং ।
সাহিত্য সংসদ ,সাভার, ঢাকা-১৩৪৪ ।
ই-মেইল : khmahabub@yahoo.com

মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

ছড়া / না জানা






                        



                                                             
                                                                    



আমের গাছে এসেছে ফুল
জাম গাছে পাতা ,
নেড়ে দেখি অন্য গাছ
নামটি তাঁর আতা ।

বড়ই গাছে বড়ই ভরা
কাঁঠাল গাছ সবুজ
তাঁদের জন্য এই ছড়া
যারা আজ অবুঝ ।

কাঁঠাল গাছে আসবে মুচী
জামের গাছে জাম,
কুয়াশাতে ফুল ঝরে যায়
ঝরে  ছোট আম ।

বেল গাছে বেল এসেছে
শিমুল গাছে ফুল,
ছোট ছোট ছেলে মেয়ে
বানায় তারে দুল ।

সজনে গাছে পাতা নেই
ডাল পালা খালি ,
কচি কচি পাতাতে
ভরা আজ বালি ।



********** সমাপ্ত **********
তারিখ :   ১০-০২-২০১৪ ইং ।
সাহিত্য সংসদ ,সাভার, ঢাকা-১৩৪৪ ।
ই-মেইল :    khmahabub@yahoo.com
https://www.facebook.com/

রবিবার, ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

ভালোবাসার দায়




( উৎসর্গ : ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে-ভালবাসাহিন সকল-কে )
******************************************************

তুমি বল্লে আমি পারবোনা চাঁদ এনে দিতে
দাও যদি তোমার ভালোবাসার শতো দায় ,
তুমি বল্লে আমি পারবোনা সূর্য এনে দিতে
যদি ধরো দু-হাতে আমার দুটি পায় ।

তুমি আমায় ভালবাসা দাও সখি
আমি এনে দেবো আকাশের সব নীহারিকা ,
এনে দেবো সূর্যের লাল নীল বেগুনী রং
যদি হও আমার ভালবাসার সাগরিকা ।

তুমি বল্লে আমি এনে দেবো শঙ্খ চিল
পাখি হয়ে অচেনা আকাশে উড়ে ,
তুমি বল্লে আমি এনে দেবো গোধূলি বিকেল
অচেনা পাখির মতো হয়ে ভব ঘুরে ।

তুমি বল্লে আমি তোমায় এনে দেবো
তপ্ত রোদে হিমেল হাওয়ার পরশ ,
তুমি বল্লে আমি তোমায় এনে দেবো
আন-সিজনে তোমার প্রিয় ঢেড়স ।

যা-বলেছি দেবো তাই আমি...
তোমার ভালোবাসার পরিপূর্ণ মাপে ,
আমি বুঝে নেবো তোমার সব;
যদি পোড়াও আবার আগুনের দাহো তাপে ।

তোমার মতো বোকা শিরি ফরহাদ নয় ,
চাঁদ তারা নিয়েছে ওরাই যারা করেছে জয় ।
চাঁদ তারা নিয়ে হয়েছে লেখা গদ্যপদ্য ,
কোথায় পাব চাঁদ তারা বল? তুমি বল্লে এনে দিতে সদ্য ।

আমি অন্যের মতো দিতে পারবোনা ফাঁকি ,
চাঁদ তারা তাই রেখেছি বাকি ।
আর আছে বুকের ভেতরের হৃদয় দেওয়া বাকি ,
-এই লও! তাও দিলাম তোমায়?আর আছে যা টুকি টাকি ।


***********সমাপ্ত  *********
তারিখ :   ০৫-০৩-২০১১ ইং ।
সাহিত্য সংসদ ,সাভার, ঢাকা-১৩৪৪ ।
ই-মেইল :   khmahabub@yahoo.com


ভালোবাসার দায়

ভালোবাসার দায়

কবিতা / তোমার আমার মিল


ঐ দেখো উত্তরের আকাশ কালো
দক্ষিণের আকাশটা নীল,
ঠিক যেমনটি তুমি আর আমি…
যেমনটি তোমার আমার মিল।


কিছু দেখলেই যখন তোমার মুখে
বজ্রপাতের মত হঠাৎ করে আসে হাসি,
তোমার সেই হাসি দেখে; হাসতে গিয়ে
আমার এসে যায়  তখন কাশি।


ঐ দেখো আকাশ ভরা তারা
চাঁদের এই আলোকিত আঁধারে উড়ছে চিল,
ঠিক যেমনটি তুমি আর আমি…
যেমনটি তোমার আমার মিল।


রাত নেই; দিন নেই; তোমার পছন্দ
সাঁঝ গোঁজ ঘুম আর খাওয়া,
সারা দিন পরে…
আমি এলে ঘরে…
অতি ক্ষুধায় চাই যখন খেতে;
তোমার তখন হাত ব্যথা…
পা- ব্যথা শরীর ব্যথা…
ইচ্ছে হয় সুখের পরশ পেতে;
স্রষ্টার কাছে যা- কখন ও হয়নি আমার চাওয়া।


********* সমাপ্ত **********
তারিখ :   ৩১-১০-২০১২ ইং ।
সাহিত্য সংসদ ,সাভার, ঢাকা-১৩৪৪ ।

ই-মেইল :    khmahabub@yahoo.com
https://www.facebook.com/profile.php?id=100003916133092