বৃহস্পতিবার, ৬ মার্চ, ২০১৪
" বই পড়ার গুরুত্ব " গল্প লিখেছেন অরণ্য সৌরভ
মন বিষণ্ণ। কিছুই ভাল লাগছে না।
উদাসীন মনে পৃথিবীর সব সৌর্ন্দযই
ফ্যাকাশে মনে হচ্ছে।
বেঁচে থাকাটাই নিরর্থক যেন।
নিঃসঙ্গতার করাল
গ্রাসে নিমজ্জিত অথবা প্রচণ্ড
মানসিক যন্ত্রণার
মধ্যে কাটাতে হচ্ছে জীবন।
এগুলো আমাদের জীবনে প্রায়ই ঘটে।
দুশ্চিন্তা, দুঃখবোধ, মানসিক ও
শারীরিক কষ্টের তীব্র
যাতনা আমাদের জীবনেরই অংশ।
এগুলোকে মেনে নিয়েই আমাদের
বেঁচে থাকতে হয়। কিন্তু এই
পরিস্থিতি অনেক সময়ই আমাদের
কর্মস্পৃহা ও সম্ভাবনাকে নষ্ট করে দেয়।
এই থেকে পরিত্রাণের জন্য বই-ই
হতে পারে অন্যতম নিয়ামক।
আপনি যে ধরনের বই পড়ে আনন্দ পান
সেই রকম বই-ই পড়তে পারেন। দেখবেন
মন ভাল হয়ে যাবে। বইয়ের
মাঝে নিমজ্জিত
থেকে আপনি আপনাকে খুঁজে পাবেন।
মানব সভ্যতার সূচনা থেকেই মানুষের
পাঠ অভ্যাসের তথ্য পাওয়া যায়। মানুষ
বই পড়ে মনের খোরাকের জন্য,
অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য
এবং সর্বোপরি নিজেকে জ্ঞানের
আলোয় আলোকিত করার জন্য।
বই পড়া মানুষের এমন একটি দক্ষতা যার
কারণে মানুষের আর্থসামাজিক
অবস্থার দ্রুত উন্নতি সাধন হয়। বই
পড়া এখন শুধুমাত্র অবসরের বিনোদনের
মাধ্যম নয় বরং এটি এখন আমাদের
আর্থসামাজিক অবস্থা পরিবর্তনের
একটি শক্তিশালী মাধ্যম। বই পড়ার
গুরুত্ব আমরা কিছু মনীষীদের
উক্তি থেকে অতি সহজেই
বুঝতে পারি। স্পিনোজা বলেন, ‘ভাল
খাদ্য বস্তু পেট ভরে কিন্তু ভাল বই
মানুষের আত্মাকে পরিতৃপ্ত করে।’
দেকার্তে বলেন, ‘ভাল বই
পড়া মানে গত শতাব্দীর
সেরা মানুষদের সঙ্গে কথা বলা।’
ইউরোপ কাঁপানো নেপোলিয়ান
বলেন, ‘অন্তত ষাট হাজার বই
সঙ্গে না থাকলে জীবন অচল।’ জন
মেকলে বলেন, ‘প্রচুর বই নিয়ে গরিব
হয়ে চিলেকোঠায় বসবাস করব তবু এমন
রাজা হতে চাই না যে বই
পড়তে ভালবাসে না।’ নর্মান মেলর
বলেন, ‘আমি চাই যে বই পাঠরত
অবস্থায় যেন আমার মৃত্যু হয়।’
যুগে যুগে এই রকমভাবে শত শত
মনীষী বই পড়ার গুরুত্ব মানুষের
কাছে তুলে ধরেছেন।
বই পড়া মানসিক প্রক্রিয়াকে সক্রিয়
রাখে। বই পড়লে আমাদের মস্তিষ্ক
চিন্তা করার খোরাক পায়,
সৃজনশীলতা বাড়ে এবং তথ্য
ধরে রাখার ক্ষমতা সৃষ্টি হয়। বই
পড়লে মানুষ সময়ের
সঙ্গে সঙ্গে আধুনিক মনষ্ক হয়ে ওঠে।
একটি জটিল কঠিন বিষয়কে সহজ
করতে পারে বই। ক্লাসে একজন শিক্ষক
যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেন
বই তার চেয়েও কঠিন বিষয়গুলোর সহজ
সমাধানের তথ্য দিতে পারে। বই
আপনার দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে সাহায্য
করবে। অনেক গবেষণায় প্রমাণিত
এবং দেখা গেছে যে, কেউ যদি তার
মস্তিষ্কের
ক্ষমতাকে কাজে না লাগায়
তবে তার ব্রেইন পাওয়ার
ধীরে ধীরে কমতে থাকে,
স্মৃতিশক্তির ধরে রাখার
ক্ষমতা কমতে থাকে। বই
পড়লে মানুষের মস্তিষ্কের কোষ
এবং কলাসমূহের
কার্যক্ষমতা বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। একজন
মানুষ যে পেশায়ই দক্ষ হোক না কেন
তার
পেশাদারিত্বে উৎকর্ষতা অর্জনের
জন্য বার বার বইয়ের
কাছে ফিরে আসতে হয়। কারণ
জ্ঞানের সূচনা সেখান
থেকে এবং সে জ্ঞানকে সামগ্রিকভাবে কাজে লাগানোর
দক্ষতা মানুষ বই পড়ে পেয়ে থাকে।
মানুষের মননশীল, চিন্তাশীল,
সৃষ্টিশীল চিন্তার যাবতীয় সূচনার
বিস্ফোরণ একমাত্র বইয়ের
মাধ্যমে হতে পারে। বই পড়ার গুরুত্ব
হাজার হাজার পৃষ্ঠাজুড়ে লিখলেও
শেষ হবে না। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়
দিন দিন মানুষের মাঝে বই পড়ার
আগ্রহ কমে যাচ্ছে। মানুষ এখন বইয়ের
পরিবর্তে ফেসবুক, টিভি,
সিনেমা আর আড্ডা দিয়েই তাদের
অবসর সময় কাটায়। বই কেনা ও পড়ার
অভ্যাসে ভাটা পড়ছে।
প্রযুক্তি নির্ভর কিছু মানুষ
বইকে সময়ক্ষেপণ বলেই মনে করে।
ছাত্রছাত্রীরা নিতান্ত বাধ্য
হয়ে পাঠ্য বই পড়ে। এই যে বই পড়ার
প্রতি যে অনীহার
প্রবণতা সৃষ্টি হয়েছে তা আমাদের
ব্যক্তিক ও সামাজিক মূল্যবোধের
অবক্ষয়ের অন্যতম একটা কারণ। আমাদের
জীবসত্তা জাগ্রত থাকলেও
মানবসত্তা জাগ্রত করার
সিঁড়ি হচ্ছে বই। বই পড়তে হবে। তাই
বলব বই পড়ার নিয়মিত অভ্যাস
তৈরি করুন। দেখবেন
মানসিকভাবে অনেক
স্বস্তিতে যেমন থাকতে পারবেন
তেমনি জ্ঞানের আলোয়
নিজেকে আলোকিত করতেও সক্ষম
হবেন।
_________ সরকারী সফর আলী কলেজ;আড়াইহাজার,
নারায়নগঞ্জ
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)